হামলা হলেই প্রতিহতের ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ পুনরায় হামলা করতে এলে তাদের প্রতিহত করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একদল শিক্ষার্থী।

আজ বুধবার সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক মানববন্ধনে এ ঘোষণা দেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিক দাবি সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করেছে। এমনকি শিক্ষকদের ওপরেও তারা হামলা করে। এসব ব্যাপারে বিচার চাইতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিশ্চুপ থাকছে। কিন্তু আমরা আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহতভাবে পালন করব। এবার যদি ছাত্রলীগ হামলা চালায়, তবে তাদের শক্তভাবে প্রতিহত করা হবে।’

মানববন্ধনে উপস্থিত অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদী বলেন, ‘গত সমাবেশে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন। অথচ এর আগে ছাত্ররা ক্যাম্পাসে নিরাপদে বিভিন্ন আন্দোলন করত।’

এই শিক্ষক আরো বলেন, ‘আজকের এই মানববন্ধন প্রমাণ করে, শিক্ষার্থীরা ত্রাসের রাজত্ব ভেঙে প্রতিবাদ করতে শিখেছে। ভবিষ্যতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদের ফলে আরো শিক্ষার্থীরা আসবে।’

‘ছাত্রলীগের কথাবার্তা পোলাপানের মতো। তাদের বিভিন্নভাবে ব্রেইনওয়াশ করা হয়। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গণরুমে যে টর্চার করা হয়, এর মধ্য দিয়ে তারা ভবিষ্যতে ছাত্রলীগের বড় ক্যাডারে পরিণত হয়। এদের আশ্রয় দিচ্ছে কারা, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। ঢাবির ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে ঢাকা কলেজ ও তার আশপাশের বহিরাগতরা এসে আমাদের হামলা করেছে,’ যোগ করেন রুশাদ ফরিদী।

ছাত্রলীগের চলমান সহিংস কার্যকলাপ প্রসঙ্গে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রলীগ সরকারের ওপর মহলের কথায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করছে। এর বিচার চাইতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করতে অনুমতি নেয়নি কেন? আমরা কার কাছে বিচারের দাবি জানাব? এর বিচার করার কেউ নেই। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানাব। আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’

এ মাসের গোড়ায় অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মশিউর রহমানকে সূর্য সেন হল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ তাদের তুলে নিয়ে যায়। এর দুদিন পর ঢাবির ভিসির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় শাহবাগ থানা পুলিশ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘মশিউর রহমানকে আইনি প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়নি। কিন্তু ঢাবি প্রশাসন এতে নিশ্চুপ। আমরা প্রশাসনের কাছে তাঁর গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাই।’

মানববন্ধনে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদান, কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের গ্রেপ্তারের কারণ দর্শানো ও তাঁদের মুক্তি এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেন। এসব প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘প্রক্টর, ভিসি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা চাই’, ‘আগে নিরাপত্তা পরে ক্লাস’, ‘শিক্ষা ও হাতুড়ি, একসঙ্গে চলতে পারে না’, ‘উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর কত দিন’, ‘শিক্ষদের ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে ‍রুখে দাঁড়াও ছাত্রসমাজ’ ইত্যাদি।